ময়মনসিংহের ভালুকায় বন বিভাগের কার্যক্রমে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। চলমান বনায়ন কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে বন কর্মকর্তাদের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গিয়ে বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভালুকা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২০০ একর জমি বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দখল করে রেখেছেন বলে দাবি বন বিভাগের। ওই জমিতে গত ২৬ জুন থেকে গাছ লাগানোর কাজ শুরু করে বন বিভাগ। তখন এলাকাবাসী বন বিভাগকে বাধা দেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে বন বিভাগের বিরোধ তৈরি হয়। সম্প্রতি বন বিভাগের করা মামলায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা কারাগারে যান।
এ ঘটনার পর বন বিভাগের হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ঘুষ, চাঁদাবাজি বন্ধ এবং ভালুকার রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ খান ও কাদিগড় বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খানের অপসারণের দাবিতে আজ মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। সকালে উপজেলার সিডস্টোর বাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ করেন।
বন বিভাগের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা একটি কমিটি করেছেন। সেই কমিটির আহ্বায়ক তোফায়েল ইবনে জামালের সভাপতিত্বে ও মঞ্জুর মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে সাবেক ইউপি সদস্য কামাল হোসেন, আবদুর রউফ, শাহজাহান সিরাজ, আবুল হোসেন মাস্টার, নাসির উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, বন বিভাগের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সাধারণ মানুষের নামে বিআরএস রেকর্ডীয় জায়গায় বনায়ন বন্ধ করতে হবে। জনগণকে ঘরবাড়ি নির্মাণে হয়রানি করা যাবে না। মিথ্যা মামলা দেওয়া যাবে না। আদালতে চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বনায়ন করা যাবে না। সীমানা নির্ধারণ করে জনগণকে জমি বুঝিয়ে দিয়ে বন বিভাগের জমি বন বিভাগ বুঝে নেবে। বক্তারা রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট কর্মকর্তার অপসারণের দাবি জানান।
সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভালুকার ইউএনও আলীনূর খান ঘটনাস্থলে যান। তিনি আন্দোলনাকীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
ইউএনও আলীনূর খান বলেন, বন বিভাগ নিয়ে এলাকাবাসীর নানা ধরনের অভিযোগ আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বনের দাবি করা জায়গা চিহ্নিত করে যেন নিয়ে নেয়। কিন্তু বন বিভাগ দাগ অনুযায়ী সব জমি দাবি করে চিহ্নিত করছে না। তাঁরা বন বিভাগের সঙ্গে বসে যাঁরা অভিযুক্ত নন, যাচাই–বাছাই শেষে মামলা থেকে তাঁদের যেন অব্যাহতি দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ জানাবেন।
বন বিভাগের ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ খান বলেন, বনের জমিতে গাছ লাগাতে গেলে তৎকালীন সংসদ সদস্য এম এ ওয়াহেদের থেকে প্রথমে বাধা আসে। ক্ষমতার পালাবদলের পর গাছ লাগাতে গেলে স্থানীয় লোকজন বাধা দিতে শুরু করেন, গাছ লাগানোর পর উপড়ে ফেলেন। ২ সেপ্টেম্বর পাড়াগাঁও এলাকায় গাছ লাগাতে গেলে তাঁদের তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন, শ্রমিকদের মারধর করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেছেন। পুলিশ সেটি তদন্ত করছে।
হারুন-অর-রশীদ খান আরও বলেন, গত ২৬ জুন কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের জমিতে লাগানো চারা উঠিয়ে ধান লাগানো হয়। তৎকালীন এমপি ওয়াহেদের প্রভাবে একটি পক্ষ সেটি করেছিল। সেই ঘটনায় মামলা করলে তিনজন গ্রেপ্তার হন। এ খবরে অন্যরাও বুঝতে পারছেন, তাঁদেরও জেলে যেতে হবে। সেই ভয় থেকে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর পরামর্শে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে সম্প্রতি একটি সভা করেছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হবে না, বনের নামে নিষ্কণ্টক জমিতে বন বিভাগ গাছ লাগাবে, কেউ বাধা দেবেন না। কিন্তু তাঁরা বনের জমিতে গাছ লাগাতে দিচ্ছেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, সেগুলো সত্য নয়।
বন বিভাগের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে করা কমিটির আহ্বায়ক তোফায়েল ইবনে জামাল বলেন, ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও মৌজায় স্বাধীনতার আগে ও পরে বনের কোনো জমি ছিল না। তবু বন বিভাগ এখানে গাছ লাগাতে আসে। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বিবাদ তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘বন বিভাগে অহেতুক মামলা করে হয়রানি করায় কর্মসূচি পালন করা হয়। সরকারি কোনো জমি থাকলেও সেগুলো আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে বন্দোবস্ত চাই। জনগণের যাওয়ার জায়গা নেই।’