সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

খন্দকের যুদ্ধ ইতিহাসে অমর

খন্দকের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মক্কার কুরাইশ, মদিনার ইহুদি, বেদুইন ও পৌত্তলিকেরা মিলিত হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নামে। খন্দক মানে পরিখা বা গর্ত। এ যুদ্ধে অনেক পরিখা খনন করা হয়েছিল বলে এটি খন্দকের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধ আহজাব নামেও পরিচিত। আহজাব অর্থ সম্মিলিত বাহিনী।

নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে বনু নাজির ও বনু কোরায়জা নামে সেখানে দুটি বড় ইহুদি গোষ্ঠী বাস করত। তাদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্য গোত্রগুলো মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। খন্দকের যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব গোত্রগুলোর এক সর্বাত্মক হামলা। এ যুদ্ধে শত্রুসৈন্য ছিল ১০ হাজার। এই সংখ্যা ছিল মদিনার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। মুসলিম বাহিনীতে সৈন্য ছিল মাত্র ৩ হাজার। তবে তাদের অভিনব যুদ্ধকৌশল ছিল শত্রুদের অজানা। সে কৌশলের মুখে তারা হতাশ ও পর্যুদস্ত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কা থেকে ১০ হাজার লোকের সম্মিলিত বাহিনী মদিনায় যাত্রা করে। মক্কার এ খবর পেয়ে নবীজি (সা.) সাহাবিদের নিয়ে পরামর্শ করলেন। মদিনার তিন দিকে খেজুরগাছের বাগান। বাকি দিকটিতে পরিখা খননের পরামর্শ দেন হজরত সালমান ফারসি (রা.)। পরিখা খনন করা ছিল পারস্যদের যুদ্ধকৌশল। কোনো ঘোড়া লাফ দিয়ে যতটা দূরত্ব পেরিয়ে যেতে পারে, গর্ত খনন করা হয় তার চেয়ে প্রশস্ত করে।

পেছনে সালা পাহাড় এবং সামনে ওহুদ পাহাড়কে রেখে শুরু হলো পরিখা খনন। একেক দলে দশজন করে সদস্য। প্রতিটি দল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতায় ১০ হাত করে পরিখা খনন করতে শুরু করল। পরিখা খনন করা শেষ হলো ছয় দিনে, সম্মিলিত বাহিনী মদিনায় আসার আগেই।

১০ হাজার সেনার বাহিনী ওহুদ পাহাড়ের পাশে তাঁবু ফেলল। নবীজি (সা.) তির হাজার সাহাবি নিয়ে হাজির হলেন। দুই দল দুই দিকে, মাঝখানে খন্দক বা পরিখা। কুরাইশ বাহিনী খন্দক দেখে হতভম্ব। তারা প্রায় এক মাস মদিনা অবরোধ করে বসে রইল। অবরোধ ছিল কঠিন। মুসলমানদের অনেক বেলাই না খেয়ে থাকতে হয়। কিন্তু অবরোধকারীরা কিছুতেই পরিখা পার হতে পারল না।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) পরিখার বিভিন্ন স্থানে সৈন্য মোতায়েন করলেন। কাফেররা বাইরে থেকে পাথর ও তির ছুড়তে শুরু করলে তার প্রত্যুত্তর দেওয়া হলো। এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চলতে লাগল।

অবরোধ যত দীর্ঘ হলো, শত্রুদের উৎসাহ তত কমতে লাগল। ১০ হাজার লোকের খাওয়া–দাওয়ার ব্যবস্থা করা ছিল কঠিন। তার ওপর ছিল প্রচণ্ড শীত। একদিন প্রচণ্ড ঝড় কাফেরদের তাঁবুর ছাউনি উড়ে গেল। সৈন্যসামন্ত ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। কাফেররা এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারল না। ইহুদিরা আগেই সরে পড়েছিল। কুরাইশদেরও ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।

আহজাব যুদ্ধে আটজন মুসলিম শহীদ হন। শত্রুপক্ষে মারা যায় চারজন। অবরোধের সময়কাল নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেন ২৪ দিন, কেউ ১৫।

সুরা আহজাবে ৯ থেকে ২৭ পর্যন্ত আয়াতে খন্দকের যুদ্ধ সম্পর্কে আল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles