গত দুই মাসে একের পর এক বন্যার কবলে পড়ল দেশ। সিলেটের একাংশ ও পূর্বাঞ্চলের বন্যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। এরপর দেখা গেল উত্তরবঙ্গে রংপুর–কুড়িগ্রামের বন্যা। আর এখন ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হলো ময়মনসিংহ অঞ্চল। সেখানে টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতের পানির ঢলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার অনেক এলাকা। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক শ গ্রাম। মারা গেছেন কয়েকজন। মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি–বেসরকারিভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো এখন জরুরি।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত বৃহস্পতিবার ভোগাই, চেল্লাখালী, নেতাইসহ অন্যান্য নদ–নদীর পানি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে নদ–নদীগুলোর সঙ্গে বাঁধ ভেঙে পানি উপচে পড়ে। ফলে ময়মনসিংহ ও শেরপুরের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। বিশেষ করে আকস্মিক ঢলের কারণে অবর্ণনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমন বন্যার কবলে পড়তে হবে, তা মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল। প্রস্তুতি না থাকায় এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা। দুর্গম ও পাহাড়ের কাছাকাছি এলাকায় থাকা সমতলের জাতিগোষ্ঠীগুলোর অবস্থাও শোচনীয়।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী নয়াবিল ইউনিয়নের বয়স্ক বাসিন্দারা বলছেন, নদীতে এত পানি তাঁরা আগে কখনো দেখেননি। আটাশির বন্যার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবার। বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে দুর্গত এলাকাগুলোতে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। পরিচিতদের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার ও ত্রাণকাজ পরিচালনায় ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার তরফ থেকে শুকনা খাবারের প্যাকেট ও খাওয়ার পানি দেওয়া হচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীরাও ত্রাণসহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আশা করি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন সম্মিলিতভাবে বন্যা ও বন্যা–পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকবে।