সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

আওয়ামী গডফাদার – মানুষ পুরোনো রাজনীতিতে ফিরতে চায় না

যেকোনো কর্তৃত্ববাদী শাসন ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে টিকে থাকে। কর্তৃত্ববাদী শাসন আর স্বজনতোষী পুঁজিবাদ কীভাবে হাত ধরাধরি করে চলে, তার একটা ধ্রুপদি উদাহরণ হয়ে থাকবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসন। কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সুশাসনের তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রে যেমন এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, একইভাবে প্রতিটি বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও সংসদীয় এলাকায় এক ব্যক্তি কিংবা এক পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল গডফাদারভিত্তিক ব্যবস্থা।

ক্ষমতাতন্ত্রের সঙ্গে থাকা এসব নেতা যেমন দুর্নীতি, অপকর্ম, দখল ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমনভাবে সম্পদের মালিক হয়েছেন, যেন তাঁরা তাঁদের হাতে আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন। কেউ কেউ এ সম্পদের বড় একটি অংশই পাচার করে দিয়েছেন। নিপীড়নকে তাঁরা রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। শুধু বিরোধী দল নয়, নিজের দলের লোকদের দমন-পীড়ন করেই তাঁরা ক্ষমতায় টিকে ছিলেন।

দলীয় কমিটি ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়নকাজের বড় কমিশন আদায় এবং জমি দখলের মাধ্যমে কেউ কেউ গডফাদারদের গডফাদার হয়ে উঠেছিলেন। বরিশালে এমন একজন নেতা পুরো বিভাগে ১২ জন দলীয় গডফাদার তৈরি করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের গডফাদারদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে, তার সবই গুরুতর অপরাধ। ক্ষমতার অপব্যবহার ও ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব লোক ছিলেন জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী ও নিপীড়ক চরিত্রের। প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের জমি জোর করে দখলের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের অত্যাচারে অসংখ্য মানুষকে ঘরছাড়া হতে হয়েছে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নতুন একটি জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, মানুষ আর পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরতে চায় না। একের পর এক বিতর্কিত ও কারসাজির নির্বাচনই ছিল আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের মূল রক্ষাকবচ। সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, পুলিশ, আমলাতন্ত্র ও দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেই তারা এটা করেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রতিষ্ঠান সংস্কারে কমিশন করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপ শুরু করেছে। পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত থেকে বেরিয়ে এসে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে পৌঁছাতে হলে প্রধানভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ও ঐকমত্য প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজ নিজ দলের মধ্যে নেতৃত্ব বাছাই থেকে শুরু করে সব জায়গায় গণতন্ত্র ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা না করে, তাহলে কোনো সংস্কারই টেকসই হতে পারে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles