১২:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটের উন্নয়ন দাবিতে সরকারকে দুই মাসের আল্টিমেটাম দিল ‘বিরক্ত সিলেটবাসী নিউইয়র্ক’

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় ১৫ অক্টোবর বিকেলে এক ব্যতিক্রমী সমাবেশে একত্রিত হয়েছিলেন সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীরা। সংগঠনের নামেই যেন প্রতিবাদের ভাষা— ‘বিরক্ত সিলেটবাসী নিউইয়র্ক’। এই এক শব্দের মধ্যে ধরা আছে তাদের ক্ষোভ, হতাশা, আবার একই সঙ্গে আশার প্রতিধ্বনি। দীর্ঘদিনের উন্নয়নবঞ্চনার বিরুদ্ধে এই ‘বিরক্তি’ এখন রূপ নিয়েছে এক সামাজিক প্রতিবাদের প্রতীকে।

সমাবেশে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে যোগ দেন। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও বৃহত্তর সিলেট—সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ—এখনো উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। অথচ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস এই প্রবাসী সিলেটবাসীরাই। রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি সচল থাকলেও নিজ অঞ্চল পড়ে আছে প্রশাসনিক অবহেলার ছায়ায়।

এক বক্তা ক্ষোভভরে বলেন, “দেশ স্বাধীন হয়েছে পঞ্চাশ বছর আগে, কিন্তু সিলেট এখনো অবহেলার বেড়াজালে বন্দি।” তবে এই ক্ষোভের ভেতরও ছিল আত্মমমতা—নিজ মাটি, নিজ মানুষের প্রতি টান।

সমাবেশের সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও সংগঠক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন। তিনি সরকারকে সিলেটের উন্নয়ন দাবিতে দুই মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে ঘোষণা দেন, “এরপর আমরা কঠোর আন্দোলনে নামবো।”

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ‘জাগো সিলেট’ আন্দোলনের নেতা বাবরুল হোসেন বাবুল, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বদরুল হোসেন খান, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান সেলিম, বেদারুল ইসলাম বাবলা, সেলিনা উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী, ফারমিস আক্তার, ফকু চৌধুরী, ভায়লা সালিনা, মাহবুব রহমান, শেলী জামান খান, শাহ মুজিবুর রহমান জকন, কিনু চৌধুরী, জাভেদ উদ্দিন, শেখ ফজলুল, আব্দুল খালেক, আবদুস শহীদ, শেকিল চৌধুরী, মেরী জোবাইদা, সৈয়দ উতবা, তাজুল ইসলাম তালুকদার, শামীম আহমেদ, লোকমান হোসেন লুকু, আজিমুর রহমান বোরহান, কাদির খান, সালেহ চৌধুরী, বদরুল খান, সৈয়দ লোকমান, শাহানা বেগম, নুরে আলম জিকু, মো. জোসেফ চৌধুরী, কল্লোল আহমেদ, মাহবুবুর রহমান, আসিফ চৌধুরী, আলিম উদ্দীন, শেখ আতিক, মিসবাহ আহমেদ, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু এবং টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহের, সাংবাদিক এমদাদ দীপু প্রমুখ।

সমাবেশে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে একটি স্মারকলিপি পাঠ করেন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সুমাইয়া চৌধুরী।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও সিলেট অঞ্চল অবহেলিত। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, হাসপাতালের সেবা করুণ, রেললাইন জরাজীর্ণ, বিমানবন্দর সীমিত ক্ষমতার। উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হলেও অর্থ ছাড় না হওয়ায় কাজের অগ্রগতি থেমে যায় কাগজে-কলমে।

বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। তারা প্রশ্ন তোলেন, “একটি অঞ্চলের নামেই যখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সীমিত কেন থাকবে?”

এছাড়া তারা দাবি জানান, ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক দ্রুত ছয় লেনে উন্নীত করা, ঢাকা–সিলেট রেলপথ সংস্কার ও নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা, সিলেট–কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু করা, সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (SDA) সক্রিয় করা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা, প্রবাসীদের সম্পত্তি রক্ষায় আইনগত নিশ্চয়তা ও প্রতিটি জেলায় প্রবাসী মনিটরিং সেল গঠন, বিমানবন্দর ও সরকারি অফিসে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও উন্নয়নের জোরালো দাবি উঠে আসে। বক্তারা বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আধুনিকীকরণ, অফিস-আদালতে ঘুষ বন্ধ, এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আগে সিলেট অঞ্চলের প্রয়োজন মেটাতে হবে।

এছাড়া সিলেটের নদী-খাল রক্ষা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, পর্যটন এলাকা সংরক্ষণ ও সরকারি উদ্যোগে উন্নয়ন, সিলেট–ঢাকা বিমানে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদানের দাবি জানান তারা।

বক্তারা বলেন, “সিলেটের উন্নয়ন মানে কেবল সিলেট নয়—এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।”

ডাইভার্সিটি প্লাজার আকাশে বিকেলের আলোয় উড়ছিল নানা ব্যানার ও পোস্টার— “সিলেটের উন্নয়ন চাই”, “বঞ্চনার অবসান চাই”, “সিলেটবাসীর দাবি বাস্তবায়ন কর।”

বক্তাদের ভাষায়, এটি শুধু একটি সমাবেশ নয়—এটি এক চেতনার পুনর্জাগরণ। প্রবাসের মাটিতে দাঁড়িয়ে তারা যেন মাতৃভূমির প্রতি নতুন করে শপথ নিলেন—

আমরা সিলেটের উন্নয়ন চাই।
আমরা সমান অধিকার চাই।
আমরা বঞ্চনার অবসান চাই।

Tag :
About Author Information

Pinky Rahman

সমালোচিত ইসলামী দুই বক্তার যত মিথ্যাচার, ইসলামী আলোচনার নামে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ

সিলেটের উন্নয়ন দাবিতে সরকারকে দুই মাসের আল্টিমেটাম দিল ‘বিরক্ত সিলেটবাসী নিউইয়র্ক’

আপডেট : ০৮:০৯:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় ১৫ অক্টোবর বিকেলে এক ব্যতিক্রমী সমাবেশে একত্রিত হয়েছিলেন সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীরা। সংগঠনের নামেই যেন প্রতিবাদের ভাষা— ‘বিরক্ত সিলেটবাসী নিউইয়র্ক’। এই এক শব্দের মধ্যে ধরা আছে তাদের ক্ষোভ, হতাশা, আবার একই সঙ্গে আশার প্রতিধ্বনি। দীর্ঘদিনের উন্নয়নবঞ্চনার বিরুদ্ধে এই ‘বিরক্তি’ এখন রূপ নিয়েছে এক সামাজিক প্রতিবাদের প্রতীকে।

সমাবেশে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে যোগ দেন। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও বৃহত্তর সিলেট—সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ—এখনো উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। অথচ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস এই প্রবাসী সিলেটবাসীরাই। রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি সচল থাকলেও নিজ অঞ্চল পড়ে আছে প্রশাসনিক অবহেলার ছায়ায়।

এক বক্তা ক্ষোভভরে বলেন, “দেশ স্বাধীন হয়েছে পঞ্চাশ বছর আগে, কিন্তু সিলেট এখনো অবহেলার বেড়াজালে বন্দি।” তবে এই ক্ষোভের ভেতরও ছিল আত্মমমতা—নিজ মাটি, নিজ মানুষের প্রতি টান।

সমাবেশের সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও সংগঠক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন। তিনি সরকারকে সিলেটের উন্নয়ন দাবিতে দুই মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে ঘোষণা দেন, “এরপর আমরা কঠোর আন্দোলনে নামবো।”

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ‘জাগো সিলেট’ আন্দোলনের নেতা বাবরুল হোসেন বাবুল, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বদরুল হোসেন খান, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান সেলিম, বেদারুল ইসলাম বাবলা, সেলিনা উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী, ফারমিস আক্তার, ফকু চৌধুরী, ভায়লা সালিনা, মাহবুব রহমান, শেলী জামান খান, শাহ মুজিবুর রহমান জকন, কিনু চৌধুরী, জাভেদ উদ্দিন, শেখ ফজলুল, আব্দুল খালেক, আবদুস শহীদ, শেকিল চৌধুরী, মেরী জোবাইদা, সৈয়দ উতবা, তাজুল ইসলাম তালুকদার, শামীম আহমেদ, লোকমান হোসেন লুকু, আজিমুর রহমান বোরহান, কাদির খান, সালেহ চৌধুরী, বদরুল খান, সৈয়দ লোকমান, শাহানা বেগম, নুরে আলম জিকু, মো. জোসেফ চৌধুরী, কল্লোল আহমেদ, মাহবুবুর রহমান, আসিফ চৌধুরী, আলিম উদ্দীন, শেখ আতিক, মিসবাহ আহমেদ, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু এবং টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহের, সাংবাদিক এমদাদ দীপু প্রমুখ।

সমাবেশে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে একটি স্মারকলিপি পাঠ করেন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সুমাইয়া চৌধুরী।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও সিলেট অঞ্চল অবহেলিত। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, হাসপাতালের সেবা করুণ, রেললাইন জরাজীর্ণ, বিমানবন্দর সীমিত ক্ষমতার। উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হলেও অর্থ ছাড় না হওয়ায় কাজের অগ্রগতি থেমে যায় কাগজে-কলমে।

বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। তারা প্রশ্ন তোলেন, “একটি অঞ্চলের নামেই যখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সীমিত কেন থাকবে?”

এছাড়া তারা দাবি জানান, ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক দ্রুত ছয় লেনে উন্নীত করা, ঢাকা–সিলেট রেলপথ সংস্কার ও নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা, সিলেট–কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু করা, সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (SDA) সক্রিয় করা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা, প্রবাসীদের সম্পত্তি রক্ষায় আইনগত নিশ্চয়তা ও প্রতিটি জেলায় প্রবাসী মনিটরিং সেল গঠন, বিমানবন্দর ও সরকারি অফিসে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও উন্নয়নের জোরালো দাবি উঠে আসে। বক্তারা বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আধুনিকীকরণ, অফিস-আদালতে ঘুষ বন্ধ, এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আগে সিলেট অঞ্চলের প্রয়োজন মেটাতে হবে।

এছাড়া সিলেটের নদী-খাল রক্ষা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, পর্যটন এলাকা সংরক্ষণ ও সরকারি উদ্যোগে উন্নয়ন, সিলেট–ঢাকা বিমানে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদানের দাবি জানান তারা।

বক্তারা বলেন, “সিলেটের উন্নয়ন মানে কেবল সিলেট নয়—এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।”

ডাইভার্সিটি প্লাজার আকাশে বিকেলের আলোয় উড়ছিল নানা ব্যানার ও পোস্টার— “সিলেটের উন্নয়ন চাই”, “বঞ্চনার অবসান চাই”, “সিলেটবাসীর দাবি বাস্তবায়ন কর।”

বক্তাদের ভাষায়, এটি শুধু একটি সমাবেশ নয়—এটি এক চেতনার পুনর্জাগরণ। প্রবাসের মাটিতে দাঁড়িয়ে তারা যেন মাতৃভূমির প্রতি নতুন করে শপথ নিলেন—

আমরা সিলেটের উন্নয়ন চাই।
আমরা সমান অধিকার চাই।
আমরা বঞ্চনার অবসান চাই।